প্রাচীন বাঙলার ঐতিহ্যবাহী একটি খাবার হলো রসগোল্লা(rosogolla)। যেকোনো উৎসব ও অনুষ্ঠানে আমরা মিষ্টি মুখ করে থাকি এই রসগোল্লা দিয়ে। রসগোল্লা(rosogolla) মূলত হয় ছানা, চিনি ও ময়দা দিয়ে। রসগোল্লা(rosogolla) হয় এক চিনির আর এক নলেন গুড়ের। তবে নলেন গুড়ের রসগোল্লাও(nolen gurer rosogolla) বেশ বিখ্যাত। রসগোল্লা(rosogolla) কলকাতা, নদীয়া ও ওড়িশায় সবথেকে বেশি বিখ্যাত। তবে এখন সব জায়গাতেই রসগোল্লা(rosogolla) পাওয়া যায়।
ভোজনপ্রিয় বাঙালিদের শেষপাতে মিষ্টি না হলে একেবারেই চলে না। তবে বর্তমানে বিভিন্ন নিত্যনতুন মিষ্টির আবির্ভাব ঘটলেও রসগোল্লার জায়গা কেউ নিতে পারেনি। দোকানের তৈরি রসগোল্লা যেমন নরম ও সুস্বাদু হয় তেমনি বাড়িতে বানানো রসগোল্লাও বেশ নরম ও খেতে দারুন হয়। তবে বাড়িতে রসগোল্লা বানানো(rosogolla recipe) বেশ ঝামেলার মনে হতে পারে। আর রসগোল্লাও ঠিকঠাক তৈরি নাও হতে পারে। এইসব দ্বিধা দূর করে সহজ ভাবে ও সঠিক পদ্ধতি প্রয়োগ করে আপনারা খুব ভালো রসগোল্লা(rosogolla) তৈরি করে নিতে পারেন। আমার এই রসগোল্লা তৈরির পদ্ধতিতে রসগোল্লা বানানো হবে খুবই সহজ। এতে রসগোল্লা(rosogolla) হবে নরম ও রসে ভরপুর। তাহলে দুধ থেকে তৈরি ছানার রসগোল্লা রেসিপি আপনারা দেখে নিন। খুব ভালো নরম তুলতুলে এই রসগোল্লা তৈরির রেসিপি(rosogolla recipe) আপনাদের অনেক ভালো লাগবে।
উপকরণ ➤
- দুধ – ১ লিটার
- টক দই – ১ কাপ
- ঘি – ১ চা চামচ
- ময়দা – ১ চামচ
- চিনি – ১ কাপ
- বেকিং পাউডার – ১ চিমটি
রসগোল্লা তৈরির পদ্ধতি ➤
◉ রসগোল্লা তৈরির জন্যে প্রথমে একটি পাত্রে দুধ গরম করতে বসিয়ে দেব। দুধ ভালো করে ফুটতে দেব কিছু সময় ধরে। দুধ ভালো করে ফুটে গেলে আঁচে বন্ধ করে দেব।
◉ এবার দুধ থেকে ছানা কেটে নেবো। তারজন্যে গরম দুধের মধ্যে টক দই দিয়ে ভালো করে নাড়তে থাকুন। নাড়তে নাড়তে দেখবেন ছানা ও জল আলাদা হয়ে গেছে।
◉ এখন ছানার জলটা ভালো করে ঝরিয়ে নেবো। তারজন্যে একটি কাপড়ের মধ্যে ছানাটাকে নিয়ে পুটলি করে ঝুলিয়ে রেখে দিন কিছু সময়ের জন্যে। এতে জল আস্তে আস্তে পরে যাবে, চাপ দেওয়ার কোনো দরকারই নেই।
◉ এবার ছানাটা একটি প্লেটের ওপর নিয়ে নিন। এখন ছানাটা ভালো করে মেখে নেবো। তারজন্যে ছানার মধ্যে প্রথমে দেব ১ চামচ চিনি, ১ চা চামচ ঘি ও ১ চামচ ময়দা। এইসব উপকরণগুলো ছানার সঙ্গে ভালো করে ৫ মিনিট ধরে মেখে নেবো। বেশি চেপে চেপে মাখার দরকার নেই। এবারে ১ চিমটি বেকিং পাউডার দিয়ে ২ – ৩ মিনিট আবারো ভালো করে মেখে নিয়ে একটি ডো তৈরি করে নেবো। দেখবেন খুব নরম ডো তৈরি তৈরি হয়েছে।
◉ এখন ডো থেকে ছোট ছোট করে লেচি কেটে নেবো।
◉ এরপরে রসগোল্লার রস তৈরি করে নেবো। তারজন্যে একটি পাত্রের মধ্যে ১ কাপ চিনি ও ৪ কাপ জল দিয়ে ফুটিয়ে নিন। ৩ – ৪ মিনিট ধরে বেশি আঁচে রসটা ফুটতে দিন।
◉ এখন ছানার লেচিগুলো গোল গোল করে বল তৈরি করে নিন। দেখবেন ছানার বলগুলোর গায়ে যেন কোনো ফাটা না থাকে।
◉ এরমধ্যে চিনির রসটাও তৈরি হয়ে গেছে। এখন আঁচে কমিয়ে নিয়ে ছানার বলগুলো রসের মধ্যে দিয়ে দিন।
◉ এবার ঢাকা দিয়ে আঁচে বাড়িয়ে দিয়ে ১৫ মিনিট ফুটতে দিন। ১৫ মিনিট পর ঢাকা খুলে দেখুন রসগোল্লা বেশ ফুলে উঠেছে। এখন হালকা করে একটু নেড়ে নিয়ে আবারো ১৫ মিনিটের জন্যে ঢেকে দিন।
◉ তারপরে ঢাকা খুলে দেখুন রসগোল্লার রং হালকা লালচে হয়ে গেছে। তারমানে রসগোল্লা তৈরি হয়ে গেছে। এবারে আঁচে বন্ধ করে ঢাকা দিয়ে রেখে নিন ঘণ্টা খানিকের জন্যে। তারপরে ঠান্ডা হয়ে গেলে দেখুন কতটা নরম তুলতুলে হয়েছে রসগোল্লা। এখন পরিবেশন করতে পারেন এই সুস্বাদু রসগোল্লা।
মনে রাখবেন ➤
◍ টক দই দিয়ে ছানা তৈরি করলে ছানা নরম ও পরিমানে বেশি হয়।
◍ ছানা ৭ – ৮ মিনিটের বেশি সময় ধরে মাখবেন না।
◍ ছানার বলগুলো তৈরি করে রেখে দেবেন না। সঙ্গে সঙ্গে রসে দিয়ে দেবেন।
◍ ছানা বেশি জোরে জোরে ঘষে ঘষে মাখবেন না।
◍ ছানার জল চেপে চেপে বের করবেন না।
◍ আপনারা ছানা লেবুর রস বা ভিনিগার দিয়ে তৈরি করতে পারেন। তবে টক দই দিয়ে ছানা কাটালেই সবথেকে ভালো হয় রসগোল্লা।
প্রশ্ন ও উত্তর ➤
প্রশ্ন – রসগোল্লা কে আবিষ্কার করেন ?
উত্তর – নদীয়া জেলার ফুলিয়ার হারাধন ময়রা প্রথম রসগোল্লা আবিষ্কার করেন।
প্রশ্ন – রসগোল্লা কোথায় বিখ্যাত ?
উত্তর – রসগোল্লা কলকাতা, নদীয়া ও ওড়িশায় বিখ্যাত।
প্রশ্ন – রসগোল্লা ইংরেজি কি ?
উত্তর – রসগোল্লার ইংরেজি Rasgolla।
প্রশ্ন – রসগোল্লা তৈরি হয়ে গেছে তা জানার উপায় কি ?
উত্তর – একটি গ্লাসের মধ্যে জল ভোরে নিয়ে একটি রসগোল্লা দিয়ে দিন। যদি রসোগোল্লাটি ডুবে যায় তাহলে বুঝবেন রসগোল্লা তৈরি।
প্রশ্ন – স্পঞ্জ রসগোল্লা কোথায় বিখ্যাত ?
উত্তর – এই রসগোল্লা কলকাতায় বিখ্যাত।
প্রশ্ন – পশ্চিমবঙ্গের রসগোল্লা কোথায় বিখ্যাত ?
উত্তর – কলকাতা, নদীয়া ও ওড়িশায়